আবেদনের যোগ্যতা নেই, তবুও তারা বৈমানিক! - আলোকিত পূর্বধলা আবেদনের যোগ্যতা নেই, তবুও তারা বৈমানিক!
Header Ads

আবেদনের যোগ্যতা নেই, তবুও তারা বৈমানিক!

৩২ বৈমানিক নিয়োগে ২০১৮ সালে দুইবার বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ বিমান। সেই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ৩২ বৈমানিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে বিমানে যোগ দেন ২৮ জন। নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে সংস্থাটি।,

কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কারণে ওই সময় বিমান থেকে উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি সেসময় বিমান মন্ত্রণালয়ও এই নিয়োগে দুর্নীতি খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিও বৈমানিক নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতির কথা বলে। এবং তারা নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে। কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আবেদন করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও কমপক্ষে নয়জন বৈমানিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেইসব তথ্য।,


জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করে (অপারেশনাল ম্যানুয়াল)। কিন্তু ২০১৯ সালের বৈমানিক নিয়োগে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করেনি। বৈমানিক নিয়োগে প্রার্থী নির্বাচনে বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়ালে প্রার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা আছে। সেখানে বলা আছে, বাংলা মাধ্যম থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ন্যূনতম গড় গ্রেড পয়েন্ট ৩ থাকা বাধ্যতামূলক। আর ইংরেজি মাধ্যম থেকে পাস করা প্রার্থীদের ‘ও’ লেভেলে (এসএসসি সমমান) পাঁচটি বিষয়ে গড় গ্রেট ‘সি’ থাকতে হবে এবং ‘এ’ লেভেলে (এইচএসসি সমমান) দুটি বিষয়ে গড় গ্রেড ‘সি’ থাকা আবশ্যক। সেইসঙ্গে নীতিমালায় এও বলা আছে, নিয়োগে জিইডি (GED) সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না।,


বিমান বাংলাদেশ ৩২ বৈমানিক নিয়োগে প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিমানের নীতিমালা অনুযায়ী জিইডি সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বাংলা মাধ্যম থেকে আবেদন করা প্রার্থীদের গড় গ্রেড নীতিমালা অনুযায়ী ঠিক রাখা হলেও ইংরেজি মাধ্যমের গড় গ্রেড ‘বি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যা নীতিমালার চেয়ে বেশি। কিন্তু বিমানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর একটি মহল বুঝতে পারে তাদের পছন্দের প্রার্থীরা নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনই করতে পারবেন না। এমনকি তারা এটাও বুঝতে পারেন যে, তাদের পছন্দের প্রার্থীরা বিমানের নীতিমালা অনুযায়ী আরও নিম্নমানের গড় গ্রেড ‘সি’, সেটাও ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় অর্জন করতে পারেনি। একইসঙ্গে বিমানের এমন কিছু প্রার্থী ছিল যাদের জিইডি সনদ ছাড়া আর কিছুই নেই।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এর পর বিমানের ওই মহলটি ৩২ বৈমানিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ফের সংশোধন করে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা মাধ্যমের গড় গ্রেড পয়েন্ট আগেরটা থাকলেও ইংরেজি মাধ্যমেরে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে গড় গ্রেড ৩ এর জায়গায় কমিয়ে ২.৪ পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়, যা বিমানের নীতিমালা পরিপন্থী। একইসঙ্গে জিইডি সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না এই শর্তটি তুলে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় সচরাচর শুধু গ্রেড দেওয়া হয়, গ্রেড পয়েন্ট দেওয়া হয় না। নিম্নমানের এই গড় গ্রেড পয়েন্ট উল্লেখের মাধ্যমে বিমানের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ তৈরি করে দেয়।,


আরও জানা যায়, ৩২ বৈমানিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১৪৯ জন আবেদন করেন। যার মধ্যে থেকে ১২০টি আবেদন বৈধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মাধ্যমে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর এমসিকিউ এবং বর্ণনামূলক লিখিত পরীক্ষা নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতে ৭৬জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর পর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি। সেই মৌখিক পরীক্ষার পর বিমান বাংলাদেশ ২৮ জনকে বৈমানিক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে যোগদান করা এই ২৮ বৈমানিকের মধ্যে নয় জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিমানের নীতিমালা অনুযায়ী ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের গড় গ্রেড ‘সি’ এর নিচে। বিমানের সিভি ডাটাবেজ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নয় বৈমানিকের বিমানের নিয়োগ পাওয়া তো দূরের কথা নীতিমালা অনুযায়ী তাদের আবেদন করারও যোগ্যতা নেই।,


বিমানে নিয়োগ পাওয়া ২৮ বৈমানিকের মধ্যে সেই নয় জন হলেন— ইশমাম ইমতিয়াজ আহমেদ (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘ডি’, আর গণিতে ‘সি’ পেয়েছেন), ইরফান হোসেন (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘ই’ আর গণিতে ‘বি’ পেয়েছেন), জোহরা মাহজাবিন মন্দিরা (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘ই’ এবং গণিতে ‘বি’), আবু জাফর আহমেদ (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘ডি’ আর গণিতে পেয়েছেন ‘সি‘), সাকিফ সাদমাম পাঠান (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘সি’ আর গণিতে ‘ই’, জুনায়েদ রফিক (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে পেয়েছেন ‘ই’ আর গণিতে ‘বি’), মাহমুদুল হাসান রাফিদ (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে ‘ই’ আর গণিতে ‘সি’) এবং নিয়াজ রহমান (‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় ফিজিক্সে পেয়েছেন ‘ডি’ আর গণিতেও ‘ডি’)।,


এছাড়া বিমানের আরও একজন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থী মোক্তাদির আহমেদ। বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিটির অনুসন্ধান অনুযায়ী, মোক্তাদির তার ‘এ’ পরীক্ষার কোনো গ্রেড জমা দেনিন। কিন্ত অলৌকিক কারণে বিমানের ডাটাবেজে তার গ্রেড ‘সি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই মোক্তাদির তখনকার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দিক আহমেদের ভাতিজা বলে জানা গেছে। ফলে নিয়োগ পাওয়া এই বৈমানিকরা বিমানের ম্যানুয়াল অনুযায়ী আবেদন করার যোগ্যতাই রাখেন না। তবুও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তারা নিয়োগ পেয়েছেন।,


শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরেও তারা কিভাবে বিমানে নিয়োগ পেলেন?— জানতে ওই নয় বৈমানিকের একাধিক জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলেননি। এমনকি কারও কারও ফোন বন্ধও পাওয়া যায়। এছাড়া কয়েকজনকে এসএমএস পাঠানো হলেও তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।,


এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘প্রথমত একজন বৈমানিক নিয়োগে তার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রধান্য দেওয়া হয়। এরপর তার ট্রেনিং জীবন। কিন্তু এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই যদি দুর্নীতি হয় তাহলে তার বৈমানিক জীবনে নানা প্রভাব ফেলবে। এতে করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হবে, সেইসঙ্গে উড়োজাহাজ এবং যাত্রীদের জীবনেও শঙ্কা তৈরি হতে পারে। কারণ, তিনি তো মেধাবী নন। কাজেই যাদের আবেদনের যোগ্যতা নেই। তবুও নিয়োগ হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি এভিয়েশন সেক্টরে এটা কখনই গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না।’


বিমানের নীতিমালা অনুসরণ না করে কি বৈমানিক নিয়োগ দেওয়া যায়?— এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানের জিএম (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈমানিক নিয়োগে যে শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বলা হচ্ছে, সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা নিয়োগ শাখা থেকে জেনে তারপর আপনাদের জানাতে পারব। তবে সেটাও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’


এদিকে, এ বিষয়ে জানতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও যাহিদ হোসেনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।,



from Sarabangla https://ift.tt/MA63Hfw

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন